তাসনিয়া ফেব্রিকস: বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন গাজীপুরে
Published at - May 18, 2025
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে গর্বের নতুন পালক যুক্ত হয়েছে। গাজীপুরের তাসনিয়া ফেব্রিকস বিশ্বসেরা পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে, যা দেশের টেকসই শিল্প উন্নয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ২৩৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রুফটপ সোলার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যা সম্পূর্ণভাবে CapEx মডেলে সম্পন্ন হয়। এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের শীর্ষ নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানি Solaric Group।
সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বিশ্বসেরা
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (USGBC) থেকে LEED (Leadership in Energy and Environmental Design) সনদে তাসনিয়া ফেব্রিকসের প্রশাসনিক ভবন পেয়েছে ১০৭ নম্বর (মোট ১১০ এর মধ্যে)। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ স্কোরধারী পরিবেশবান্ধব কারখানা। একই দিনে তাসনিয়া ফেব্রিকসের পোশাক কারখানা ভবনও LEED সনদ অর্জন করেছে, যার প্রাপ্ত নম্বর ১০৬।
পরিবেশবান্ধব শক্তিতে অগ্রণী তাসনিয়া: সৌর প্রকল্পে Solaric-এর অংশগ্রহণ
Solaric হলো একটি নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়নকারী গ্রুপ, যার মূল কোম্পানি সিঙ্গাপুরে এবং বাংলাদেশে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ সাবসিডিয়ারি। প্রতিষ্ঠানটি CapEx (Capital Expenditure) ও OpEx (Operational Expenditure) উভয় মডেলে বড় আকারের শিল্প কারখানার রুফটপ সোলার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে। Solaric-এর প্রতিষ্ঠা করেন সিলিকন ভ্যালি (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে ফিরে আসা একজন প্রযুক্তিবিদ এবং এটি পরিচালিত হয় BUET ও IBA-র অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের দ্বারা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সোলার কোম্পানি, যাদের রয়েছে বেসরকারি ইক্যুইটি ইনভেস্টর OSIRIS, যা তাদের দ্রুত সম্প্রসারণে সহায়তা করছে। CapEx মডেলে সম্পূর্ণ বিনিয়োগটি কারখানার মালিকের নিজের উৎস থেকে বা পুঁজিবাজার থেকে আসে। নির্ধারিত সময় পর বিনিয়োগ পরিশোধ হলে কারখানা মালিক সম্পূর্ণ সোলার সিস্টেমের মালিকানা পান এবং পরবর্তী সময়ে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় বিনা খরচে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন।
এসএম সোর্সিংকে পিছনে ফেলল তাসনিয়া ফেব্রিকস
এর আগে গাজীপুরের এসএম সোর্সিং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে বর্তমানে তাসনিয়া ফেব্রিকসের প্রশাসনিক ভবন সেই স্থান অধিকার করেছে। তাদেরই আরেকটি স্থাপনা এখন এসএম সোর্সিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে।
একদিনে তিনটি ভবনের সনদ
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, ৮ মে, ২০২৫ তারিখে LEED সনদ পেয়েছে মোট তিনটি কারখানা ভবন। তাসনিয়ার দুটি ভবন ছাড়াও মির্জাপুরের কমফিট গোল্ডেন লিফ নামক একটি কারখানা ভবন ৮০ নম্বর পেয়ে প্লাটিনাম গ্রেড অর্জন করেছে। কীভাবে দেওয়া হয় LEED সনদ? LEED সনদের জন্য ৯টি ক্যাটাগরিতে ১১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। প্রাপ্ত স্কোর অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন গ্রেড দেওয়া হয়:
- ৮০+ নম্বর: LEED Platinum
- ৬০–৭৯: LEED Gold
- ৫০–৫৯: LEED Silver
- ৪০–৪৯: LEED Certified
বাংলাদেশের অর্জন
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ২৪৩টি কারখানা LEED সনদপ্রাপ্ত। এর মধ্যে:
- ১০১টি Platinum
- ১২৮টি Gold
- ১০টি Silver
- ৪টি Certified
বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৯টিই এখন বাংলাদেশে, যা এই খাতের বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্বের শক্ত অবস্থান তুলে ধরে। বাংলাদেশের গর্ব: শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব কারখানা তাসনিয়া ফেব্রিকস (প্রশাসনিক ভবন)
- এসএম সোর্সিং
- তাসনিয়া ফেব্রিকস (পোশাক কারখানা ভবন)
- গ্রিন টেক্সটাইল
- নিট এশিয়া
- ইন্টিগ্রা ড্রেসেস
- রেমি হোল্ডিংস
- ফতুল্লা অ্যাপারেলস
- একটি পরিচয় গোপন রাখা প্রতিষ্ঠান
ভবিষ্যতের পথ
তাসনিয়া ফেব্রিকসের এই সাফল্য এবং Solaric-এর কারিগরি সহায়তা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই ভবন নির্মাণে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো শক্তিশালী হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।